রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

বনফুল কবিতার সারকথা

"বনফুল" অর্থাৎ বন্য ফুল, যা কোনোরকম পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে সকলের অলক্ষে৷ সাধারনত এই ফুল গাছকে কোনো বড় বৃক্ষের নিচে বেড়ে উঠতে দেখা যায়, এদের তেমন বিশেষ কোনো গন্ধ থাকে না,সুন্দর বর্ন যদিও থাকে;কিন্তু এরা আকারে ছোট হওয়ার কারনে আমাদের অক্ষিগোচর হয় না৷ এই কবিতাটির মধ্য দিয়ে আসলে এই বনফুলকে সামনে রেখে বর্তমান সামাজিক জীবনের একটি দিকের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র৷
আজকের সমাজ বাহ্যিক সৌন্দর্যপিপাসু, অন্তরের গভীরতা মাপার সময় বা ক্ষমতা তার নেই বললেই চলে৷
যা দেখতে সুন্দর তারই প্রতি মানুষ সর্বদা ধাবমান, তা সে মানুষ নিজে হোক বা তার জীবনশৈলি ৷
আলোচ্য কবিতায় দুটি ফুলের কথা বলা হয়েছে— একটি হল প্রায় সকলের প্রিয় গোলাপ আর অন্যটি হল বনফুল যা কেবল এই সাহিত্যদুনিয়ার দৌলতেই আমাদের সাথে পরিচিতি লাভ করেছে৷
গোলাপফুলকে যেমন আমরা তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গাছ থেকে আলাদা করে তার জীবনকে নষ্ট করি ঠিক তেমনই আজ আমরা পাশ্চাত্য কে নকল করতে করতে আমাদের বাঙালীয়ানা তথা ভারতীয়তাকে অবলুপ্তির পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছি দিনদিন৷ সত্যিকারের বাঙালীয়ানা বা ভারতীয়তা আজ খুব কম অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর সেই অঞ্চলগুলোর মানুষকে আজকের পাশ্চাত্য শিক্ষিত মানুষেরা Unculterd,statusless বলে তকমা দিয়ে থাকে৷
আর এই uncultured,statusless  তকমা পাওয়া মানুষগুলোই হল আমার কবিতার বনফুল ৷
এই বনফুলের যা সৌন্দর্য আছে তা তার সম্পূর্ন নিজস্ব, কোনো কৃত্রিমতা নেই, অথচ একটা বাসি গোলাপকে অভ্র, সুগন্ধী ' রূপলী মোড়ক ব্যবহার করে সুন্দর বানাই৷ আর আমরা মানুষেরা এমনই বোকা যে আমরা নিজস্বতাহীন কৃত্রিমতাকে আঁকড়ে ধরি সতেজতাকে ছেড়ে৷

শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮

বনফুল

আমি বনফুল
বড় বড় মহীরুহের পদতলে
যেথায় সূর্যিমামা টুকিটুকি খেলে,
আমি সেথায় থাকি৷
আমি থাকি সবুজঘাসের মাঝে;
ছোট্ট আমি, সুরভি নেই আমার—
আছে শুধু বুকভরা ভালোবাসা,যা তোমায় দেব উপহার৷
আমায় কেউ সাজায় না যত্ন করে
আপন ঘরে নিজ ফুলদানি পরে!
তবুও আমি বেশ আছি এ মহিরূহের কোলে,
বৃষ্টির পরে যখন সূর্যি ঢলে
আমার শরীর থেকে হীরকসম দ্যূতি ছড়িয়ে পড়ে ;
তবে এ কৃতিত্ব আমার নহে! সবটুকু যায় সৃষ্টিকর্তার তরে৷
তখন মনে হয় হাজার দ্যূতির মাঝে,আমি বুঝি অনন্য;
হ্যাঁ আমি অনন্য;সত্যিই অনন্য!
আমি অনন্য,তাই ছেঁড়ার সাধ জাগে না মানুষের মনে,
আর তাই আমাকে মাতৃহারা হতে হয় না অকারনে ৷৷
আমি অনন্য,তাই সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের দৃষ্টি যায় না আমার ওপর৷
আমায় অনন্য করার সবটুকু ধন্যবাদ তোমায় দিলাম হে ঈশ্বর !
যদি না আমায় করতে এমন অনন্য
তবে গোলাপের মত আমিও হতাম ফুলদানিতে শুকনো!
আমি সুখে আছি আপন মাতৃক্রোড়ে,মহীরূহের ছত্রছায়ায়
এই আলো,বাতাস,পাখি,এই প্রকৃতি আমায় বোঝে,ভালোবাসে আমায়;
বুঝবে না হয়তো সকলে এ ভালোবাসার প্রকৃতি ও মর্ম
তবে, আমার কাছে এ ভালোবাসা দামি, আমার রক্ষাবর্ম৷৷