সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

পথের মেয়ে

ছোট্ট মেয়ে বসে পথের বাঁকে
আকাশপানে চেয়ে থাকে,
পরনের মলিন বসনখানি
ছিড়ে গেছে অনেকখানি,
দেহখানা জীর্ণ তার;
দু'বেলা পায় না দু'মুঠো আহার!
খিদেপেলে ছুটে যায় রাস্তার ডাষ্টবিনে—
পচা-গলা-উচ্ছিষ্ট যা পায়,বসে খায় এক কোনে৷
শুকালে গলা তেষ্টায়
ভীত-সন্ত্রস্ত পায়ে কলের দিকে যায়,
ভয় জাগে মনে তার !
এই বুঝি কেউ তাকে করল প্রহার৷
কত মানুষ দ্যাখে সে চারপাশে-
কেউ আসে রিক্সায়,কেউ বা ঠান্ডা গাড়িতে বসে,
কেউ যায় পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে,
কেউ বা হেঁটে যায়,হাতে নিয়ে খাবার ভর্তি থলে৷
কেউ পরে রোজ নতুন নতুন পোশাক !
কেউ বা একই কাপড়ে করে প্রত্যহ দিনপাত —
পথে থেকেই দ্যাখে সে জীবন-রঙ্গমঞ্চের নাটক
করে খিদের জ্বালা আর অভিলাষকে আটক৷
গ্রীষ্মের দাবদাহ আসুক বা নিশীথরাতের বর্ষা ;
এই পথই তার ঘর, পথই তার ভরসা !!


একদিন; হঠাৎই তার চোখে পড়ে রুটি দু'খান !
পেয়ে খাবারের সন্ধান নেচে ওঠে তার মনপ্রান ,
রুটিটি নিয়ে সযত্নে , ফিরে আসে নিজস্থানে;
করে রুটির প্রতি দৃষ্টিপাত
নয়ন তার অঝোরে ঝরায় বৃষ্টিপাত ৷
অশ্রুধারা তার গ্রাসে মিশে হয় একাকার
তৃপ্ত হয় সে, ভরে তার উদর !
খাওয়া শেষে ঘুম আসে, গলাজুড়ে তেষ্টা-
তন্দ্রালুদেহ হাঁটতে না পারে, তবুও করে চেষ্টা ,
যেতে হবে কলের কাছে; মেটাতে হবে তেষ্টা৷
তৃষ্ণা মিটলে পারে নে সে আর চলতে
লুটিয়ে পড়ে মাটিতে ঘুমায় সে নিশ্চিন্তে৷


আর কখনও তার লাগবে না তেষ্টা, পাবে না খিদে,
কারন — আজ আর নেই কোনো ষ্পন্দন তার হৃদে
ফেলে দেওয়া পেস্টিসাইডস মেশা রুটিই তার নিয়েছে প্রান
করেছে দেহকে নিথর, ঘটিয়েছে অবসান— যত ছিল উচাটন ৷৷

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৮

শূন্য

তোমার থেকে শুরু সবই,তোমাতেই শেষ;
তবুও তোমার কদর বোঝে না এ মনুষ্যবেশ৷
শূন্য পাতা না হলে যে যায় না তাতে লেখা—
আবার নিঃস্ব হলে এ মন আঁকে তোমার রূপরেখা!
গণিত বলে, একা তোমার নেই কোনো মান;
অথচ;তুমিই কারো পাশে বসে বাড়াও তার সন্মান!
সবাই ভাবে,"শূন্য"; বড়ই তুমি ক্ষীন৷
বোঝেনা এ রঙীন মন একদিন তোমাতেই হবে সবকিছু বিলীন৷
ছোট্ট শিশু তোমায় আঁকে, নিজের থেকে,পেন-খাতাটি পেলে;
আমরা এত বড় হয়েও,তখন তোমায় ডাকি কেবল "গোল্লা" বলে!
আসে না মনে এ প্রশ্ন,"ছোট্ট শিশু তোমায় জানল কেমন করে?"
কত শত বর্ণ আছে,অক্ষর আছে,চিহ্ন আছে এ ভুবনজুড়ে,
তবে সবাইকে ফেলে নির্বোধ প্রান আঁকে কেন তোমায় পাতা ভরে ?
এ কি তবে তোমারই টান;তোমারই দেওয়া বার্তা ?
যা নিয়ে কখনও ভাবে না এ পাকামাথার স্নায়ুকর্তা ৷
'শূন্য'—তুমি আদিতেও ছিলে,অন্তেও আছো তুমি৷
শুধু এই আদি-অন্তের মাঝে লোভ,লালসা,হিংসাকে নিয়ে আমরা করি হ্যাংলামি৷
শূন্য হৃদয় খোঁজে বাসা,ব্যাথাতুর খোঁজে শূন্যকোন —
যেখানে অগোচরে ভিজবে তার দুনয়ন!
কখনওবা করি তোমাকেই আপন করে সবকিছু ছিন্ন—
আবার কখনও তুমিই এ প্রানকে করো বিষাদ-বিষন্ন৷
এ বিশ্বচরাচরে চিরসত্যের আর নেই স্থান তুমি ভিন্ন,
আর তাই বুঝি এ ধরনীর বাইরে তুমিই হলে "মহাশূন্য"৷

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

বনফুল কবিতার সারকথা

"বনফুল" অর্থাৎ বন্য ফুল, যা কোনোরকম পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে সকলের অলক্ষে৷ সাধারনত এই ফুল গাছকে কোনো বড় বৃক্ষের নিচে বেড়ে উঠতে দেখা যায়, এদের তেমন বিশেষ কোনো গন্ধ থাকে না,সুন্দর বর্ন যদিও থাকে;কিন্তু এরা আকারে ছোট হওয়ার কারনে আমাদের অক্ষিগোচর হয় না৷ এই কবিতাটির মধ্য দিয়ে আসলে এই বনফুলকে সামনে রেখে বর্তমান সামাজিক জীবনের একটি দিকের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র৷
আজকের সমাজ বাহ্যিক সৌন্দর্যপিপাসু, অন্তরের গভীরতা মাপার সময় বা ক্ষমতা তার নেই বললেই চলে৷
যা দেখতে সুন্দর তারই প্রতি মানুষ সর্বদা ধাবমান, তা সে মানুষ নিজে হোক বা তার জীবনশৈলি ৷
আলোচ্য কবিতায় দুটি ফুলের কথা বলা হয়েছে— একটি হল প্রায় সকলের প্রিয় গোলাপ আর অন্যটি হল বনফুল যা কেবল এই সাহিত্যদুনিয়ার দৌলতেই আমাদের সাথে পরিচিতি লাভ করেছে৷
গোলাপফুলকে যেমন আমরা তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গাছ থেকে আলাদা করে তার জীবনকে নষ্ট করি ঠিক তেমনই আজ আমরা পাশ্চাত্য কে নকল করতে করতে আমাদের বাঙালীয়ানা তথা ভারতীয়তাকে অবলুপ্তির পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছি দিনদিন৷ সত্যিকারের বাঙালীয়ানা বা ভারতীয়তা আজ খুব কম অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আর সেই অঞ্চলগুলোর মানুষকে আজকের পাশ্চাত্য শিক্ষিত মানুষেরা Unculterd,statusless বলে তকমা দিয়ে থাকে৷
আর এই uncultured,statusless  তকমা পাওয়া মানুষগুলোই হল আমার কবিতার বনফুল ৷
এই বনফুলের যা সৌন্দর্য আছে তা তার সম্পূর্ন নিজস্ব, কোনো কৃত্রিমতা নেই, অথচ একটা বাসি গোলাপকে অভ্র, সুগন্ধী ' রূপলী মোড়ক ব্যবহার করে সুন্দর বানাই৷ আর আমরা মানুষেরা এমনই বোকা যে আমরা নিজস্বতাহীন কৃত্রিমতাকে আঁকড়ে ধরি সতেজতাকে ছেড়ে৷

শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮

বনফুল

আমি বনফুল
বড় বড় মহীরুহের পদতলে
যেথায় সূর্যিমামা টুকিটুকি খেলে,
আমি সেথায় থাকি৷
আমি থাকি সবুজঘাসের মাঝে;
ছোট্ট আমি, সুরভি নেই আমার—
আছে শুধু বুকভরা ভালোবাসা,যা তোমায় দেব উপহার৷
আমায় কেউ সাজায় না যত্ন করে
আপন ঘরে নিজ ফুলদানি পরে!
তবুও আমি বেশ আছি এ মহিরূহের কোলে,
বৃষ্টির পরে যখন সূর্যি ঢলে
আমার শরীর থেকে হীরকসম দ্যূতি ছড়িয়ে পড়ে ;
তবে এ কৃতিত্ব আমার নহে! সবটুকু যায় সৃষ্টিকর্তার তরে৷
তখন মনে হয় হাজার দ্যূতির মাঝে,আমি বুঝি অনন্য;
হ্যাঁ আমি অনন্য;সত্যিই অনন্য!
আমি অনন্য,তাই ছেঁড়ার সাধ জাগে না মানুষের মনে,
আর তাই আমাকে মাতৃহারা হতে হয় না অকারনে ৷৷
আমি অনন্য,তাই সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের দৃষ্টি যায় না আমার ওপর৷
আমায় অনন্য করার সবটুকু ধন্যবাদ তোমায় দিলাম হে ঈশ্বর !
যদি না আমায় করতে এমন অনন্য
তবে গোলাপের মত আমিও হতাম ফুলদানিতে শুকনো!
আমি সুখে আছি আপন মাতৃক্রোড়ে,মহীরূহের ছত্রছায়ায়
এই আলো,বাতাস,পাখি,এই প্রকৃতি আমায় বোঝে,ভালোবাসে আমায়;
বুঝবে না হয়তো সকলে এ ভালোবাসার প্রকৃতি ও মর্ম
তবে, আমার কাছে এ ভালোবাসা দামি, আমার রক্ষাবর্ম৷৷